বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে অপরিবর্তিত রেখেছে দেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক। গত ২৩ এপ্রিল প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট : ট্যাক্সিং টাইমস’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সংস্থাটির ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ (বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা) প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৩ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। তার আগে গত ১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি।
এ ছাড়া আগামী অর্থবছরে অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, যা জানুয়ারিতে প্রকাশিত পূর্বাভাসের চেয়ে দশমিক ৫ শতাংশ কম।
এদিকে গত ২৭ মে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, এবার ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। অর্থবছরের ৯ মাস—গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলা হয়েছিল। চূড়ান্ত হিসাবে অবশ্য তা কমে ৪ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে আসে।
আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অর্জনের খাত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বরাবরই দেখিয়ে এসেছিল। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অর্জিত হয় ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ওই প্রবৃদ্ধি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।
পরের বছর কোভিড মহামারির ধাক্কায় তা ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আবার বেড়ে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠেছিল। পরের বছর (২০২১-২২) ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ১০ শতাংশে উঠলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবার কমে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে আসে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছিল গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির হালচাল নিয়ে বলা হলেও বাংলাদেশ নিয়ে তেমন কিছু বলা হয়নি। শুধু একটি সরণিতে বিভিন্ন দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিরও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এপ্রিলে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ক্রমাগত আর্থিক চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে।
বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি কমার কারণ হিসেবে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘প্রাথমিকভাবে গত গ্রীষ্মে সামাজিক অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা থেকে উদ্ভূত ‘ব্যাঘাতগুলোর’ প্রভাব পড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে। ব্যবসা-বাণিজ্য বিঘ্ন হওয়ার ক্ষেত্রে এর যেমন প্রভাব দেখা গেছে, তেমনি মূল্যস্ফীতির স্থায়িত্ব বাড়িয়েছে, ব্যাংক খাতের অবস্থার অবনতি ঘটিয়েছে, সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
শুধু বিশ্বব্যাংক নয়, অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে। গত ৯ এপ্রিল প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) প্রতিবেদনে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, বাংলাদেশে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। এর আগে সংস্থাটি ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে বলে প্রতিবেদনে বলেছে এডিবি।
২২ এপ্রিল বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠক চলাকালে প্রকাশিত আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক (এপ্রিল ২০২৫) প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।
বিনোদন
নতুন গানে ইভা রহমান 31-01-2024স্বাস্থ্য
আরও ৫১ জনের করোনা শনাক্ত 03-02-2024বিশ্ব
ব্রিটেনের রাজা ক্যানসারে আক্রান্ত 02-02-2024বাংলাদেশ
পঞ্চগড়ে দিনে তাপমাত্রা বাড়লেও রাতে অনুভূত হচ্ছে শীত 02-02-2024