আসলে এই বার্তাটি ছিল একটি কম্পিউটার ভাইরাস। নাম ব্রেইন। ধারণা করা হয় এই ভাইরাসটি পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসির প্রথম ভাইরাস।
এই ব্রেইন ভাইরাসের জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানের লাহোরের একটি দোকানে। কিন্তু ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে। এর জন্মের সাথে জড়িত ছিল পাকিস্তানি দুই ভাই- আমজাদ ফারুক আলভী ও বাসিত আলভী।
তাদের কোম্পানি ব্রেইন কম্পিউটার সার্ভিসেসের নামানুসারে এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়।
আমজাদ ফারুক আলভী জানান যে তাদের তিন ভাই-ই কম্পিউটারের ব্যাপারে খুব উৎসাহী ছিলেন। তিনি বলেন, শৈশবে বেড়ে ওঠার সময়েই তিনি কম্পিউটারের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
“স্কুলে পড়ার সময়েই আমার পিতা আমাদেরকে ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরির সদস্য করে দিয়েছিলেন। প্রায়শই আমি স্কুল ফাঁকি দিয়ে এই লাইব্রেরিতে চলে যেতাম। সেখানে ইলেকট্রনিক্স ও কম্পিউটারের ওপর যেসব বই ছিল তার সবই পড়ে ফেলেছিলাম,” বলেন তিনি।
স্কুল পালিয়ে এ ধরনের বই পড়ার ফল শেষ পর্যন্ত তার জন্য ভালোই হয়েছে। গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানে তিনি ডিগ্রি নিয়েছেন। পরে তিনি ও তার ভাই মিলে লাহোরের এক দোকানে তাদের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
তারা ১৯৮৩ সালের দিকে এই ব্যবসা শুরু করেন। তাদের কাজ ছিল পাকিস্তানে ব্রিটিশ ব্র্যান্ডের একটি ছোটখাটো কম্পিউটারের সার্ভিস দেওয়া। এই কম্পিউটারের নাম সিনক্লেয়ার। স্যার ক্লাইভ সিনক্লেয়ার এটি তৈরি করেছিলেন।
তিনি বলেন, “পাকিস্তানে ছোটখাটো এই হোম কম্পিউটারের আমরাই ছিলাম একমাত্র সার্ভিস প্রোভাইডার। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আইবিএম পিসি কম্পেটবলসের বিক্রি শুরু হয়ে গেল।”
কম্পিউটার প্রস্তুতকারী কোম্পানি আইবিএম, যা আসলে ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি হিসেবে পরিচিত ছিল, সেটি একসময় কম্পিউটার ব্যবসার প্রতিযোগিতায় সব জাপানি কোম্পানিকে পরাজিত করলো।
আমজাদ ও তার ভাই তখন এই আইবিএম কম্পিউটারের সার্ভিস দেওয়া এবং এই কম্পিউটার বিক্রি করতে শুরু করেন।
এর পর দুই ভাই-এর ব্যবসার প্রসার ঘটতে লাগল। কিন্তু আমজাদ তখনও কম্পিউটার কোডিং নিয়ে খেলার নেশায় মত্ত ছিলেন।
“সেসময় আমি দুটো প্রোগ্রাম একসাথে কিভাবে চালাতে হয় এসংক্রান্ত একটি লেখা পড়লাম। একটি প্রোগ্রাম চলবে সামনে এবং পেছনে অন্য প্রোগ্রামটিও চলতে থাকবে,” বলেন তিনি।
আমজাদ মনে করলেন এই প্রোগ্রামটি হয়তো মানুষকে বিস্মিত করতে পারে। তখন তিনি এরকম একটি প্রোগ্রাম তৈরির কথা চিন্তা করলেন।
তিনি বলেন, “আমার মনে হলো যে কেউ একজন যদি দীর্ঘ সময় ধরে একটি প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করতে থাকে, তাহলে তার কাজে ব্রেকের জন্য, কিম্বা তাকে আনন্দ দেওয়ার জন্যে, পেছনে চলতে থাকা একটি প্রোগ্রাম হঠাৎ করেই সামনে চলে এসে তাকে গল্প বলতে পারে অথবা বই থেকে কিছু পাঠ করে শোনাতে পারে।”
আমজাদ তখন এ ধরনের একটি প্রোগ্রাম তৈরির কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। একসময় তার বন্ধুরা দেখল কম্পিউটারে কঠিন কঠিন সব কাজ করার সময় হঠাৎ করেই তাদের স্ক্রিনে ভিন্ন ধরনের স্টোরি ও কথা ভেসে উঠছে। এটা দেখে তারা সবাই অবাক হলো।
“তখন আমরা এটিকে কিভাবে লুকিয়ে রাখা যায় তা নিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম। যাতে এটা কেউ দেখতে না পারে। আমরা একটা কোড তৈরি করলাম এবং এক পর্যায়ে ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে গেলাম,” বলেন আমজাদ ফারুক আলভী।
আমজাদ ও তার ভাই বাসিত তখন এই সফটওয়্যার তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করতে লাগলেন। তাদের ব্যবসা বেশ ভালোই চলছিল।
“আমাদের এক ডাক্তার বন্ধুর কাছ থেকে একটি অর্ডার পেলাম। দরদাম ও খরচ নিয়ে আলোচনা করার সময় তিনি বললেন যে তাদের বাজেট খুব সীমিত। তাই তিনি খুব অল্প খরচে এই সফটওয়্যার তৈরির করতে বললেন।”
“আমি বললাম ঠিক আছে। তবে আমরাই এই কোডের মালিক থাকবো এবং আপনি সেটা কোথাও বিক্রি করতে পারবেন না। কাউকে দিতেও পারবেন না। এ সংক্রান্ত কোনো চুক্তি লেখার ব্যাপারে আমরা খুব বেশি দক্ষ ছিলাম না। সেসময় পাকিস্তানে সাইবার আইনও ছিলো না। কোড কিভাবে সুরক্ষিত রাখতে হবে সেবিষয়েও আমাদের ধারণা ছিল না,” বলেন তিনি।
তাই তাদের তৈরি কোড কপি না করার ব্যাপারে তারা তাদের ডাক্তার বন্ধুকে সতর্ক করে দিলেন। বললেন, “আপনি যদি কপি করেন তাহলে কিন্তু এটা ছড়িয়ে পড়বে। ওই বন্ধু তাতে রাজিও হলেন।
বিনোদন
নতুন গানে ইভা রহমান 31-01-2024স্বাস্থ্য
আরও ৫১ জনের করোনা শনাক্ত 03-02-2024বাংলাদেশ
পঞ্চগড়ে দিনে তাপমাত্রা বাড়লেও রাতে অনুভূত হচ্ছে শীত 02-02-2024বিশ্ব
ব্রিটেনের রাজা ক্যানসারে আক্রান্ত 02-02-2024