সাম্প্রতিক খবর

প্রযুক্তি
views

রকেট উৎক্ষেপণের সময় অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে, তবে গত কয়েক দশক ধরে ব্যর্থতার ঘটনাগুলোর মধ্যে আশ্চর্যজনকভাবে অনেকগুলো জায়গায় মিল রয়েছে।

তবে যখন সমস্যা দেখা দেয় তখন রকেট লঞ্চ খবরের সবচেয়ে বড় শিরোনামে পরিণত হয়।

স্টারশিপ ওয়ান ছিল বাণিজ্যিক মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় রকেট উৎক্ষেপণ। বিশাল সুপার হেভি রকেটের ওপর বসানো স্টারশিপ মহাকাশযানের একটি পরীক্ষামূলক মডেলের প্রথম উৎক্ষেপণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আশাবাদ তৈরি হয়েছিল।

চলতি বছরের ২০শে এপ্রিল টেক্সাসের বোকা চিকার লঞ্চ প্যাড থেকে ধোঁয়া এবং ধুলোর বিশাল মেঘ উড়িয়ে যখন রকেটটি আকাশে উড়লো, তখন মহাকাশ অনুসন্ধানের একটি নতুন যুগের সূচনা হলো।

কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।

স্টারশিপের প্রথম উৎক্ষেপণে রকেটটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে নিয়ন্ত্রিত পুন:প্রবেশ এবং মেক্সিকো উপসাগরের উষ্ণ জলে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার কথা ছিল।

কিন্তু লঞ্চ করার সময় সুপার হেভি বুস্টারের ৩৩টি ইঞ্জিনের মধ্যে তিনটি চালু হয়নি, এবং আকাশে উড়ে যাওয়ার সময় আরও কয়েকটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে।

প্রাথমিক লঞ্চের প্রায় চার মিনিট পর রকেটটি পাগলের মতো গড়াতে শুরু করে এবং তখন উপসাগরের ওপরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেটিকে ধ্বংস করা হয়।

স্টারশিপ ওয়ানের উদ্বোধনী ফ্লাইটের ব্যর্থতা ছিল মহাকাশ জয়ের জন্য একবিংশ শতাব্দীর নতুন প্রতিযোগিতায় খুবই বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

স্পেসএক্স বলছে, এই ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে পরবর্তী রকেট উৎক্ষেপণের জন্য অনেক শিক্ষা অর্জন করা গেছে।

ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বোকা চিকা লঞ্চ সাইটটি কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিষ্কার করার পর আবার নতুনে করে রকেট লঞ্চ করা হবে।

স্পেসএক্স মনে করে, ঐ দুর্ঘটনা কোন ধরনের ব্যর্থতা নয়। তারা বলছে, এই ঘটনা পরবর্তী রকেট লঞ্চের আগে ত্রুটিগুলো কাটিয়ে ওঠার একটি উপায় মাত্র।

কিন্তু রকেট উৎক্ষেপণে ব্যর্থতা - এক্ষেত্রে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে ঘটা ব্যর্থতা - প্রায়ই নিয়মিত সাফল্যের চেয়ে বেশি করে খবরের শিরোনাম হয় এবং সেই খবর সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক কভারেজ পায়।

মানুষ মহাকাশে রকেট পাঠাতে শুরু করেছে ৭৫ বছরেরও বেশি সময় আগে, সেই বিবেচনায় রকেট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে সাফল্যের সম্ভাবনা আসলে কতটা থাকে?

এসব কাজে কী ধরনের ঝুঁকি থাকতে পারে তা অনুমান করতে পারেন যেসব মানুষ, ডেভিড ওয়েড তাদের একজন। এট্রিয়াম স্পেস ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে তিনি একজন আন্ডাররাইটার। এই সংস্থা বাণিজ্যিক স্পেস লঞ্চের বীমা করিয়ে থাকে।

“গত বছর ২০২২ সালে, ১৮৬টি রকেট লঞ্চ হয়," - বলছেন তিনি। এগুলো ২,৫০৯টি স্যাটেলাইট কক্ষপথে নিয়ে যায়, যার বেশিরভাগই ছিল স্টারলিংক, স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা।

“[স্পেসএক্স] ফ্যালকন ৯-এ একেকবারে ৬০টি পর্যন্ত উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়,” জানালেন মি. ওয়েড, “কিন্তু ১৮৬টি লঞ্চের মধ্যে ব্যর্থ হয়েছে মাত্র আটটি।“

তার মানে, ব্যর্থতার হার মাত্র ৪% - প্রতি ২৫টি লঞ্চের মধ্যে একটি। কিন্তু মি. ওয়েড বলছেন, ২০২২ সালে এই হিসেবে কিছুটা অসঙ্গতি দেখা দিয়েছিল।

গত বছর রকেট উৎক্ষেপণের সংখ্যা আগের বছরগুলির তুলনায় নতুন রেকর্ড তৈরি করে।

মহাকাশ যানের চলাচল কতটা দ্রুতগতিতে বাড়ছে তার কিছুটা ধারণা দেয়া যাক। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে রকেট লঞ্চের সংখ্যা ছিল ৪০টি বেশি এবং পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের তুলনায় সংখ্যাটি ছিল দ্বিগুণ। কিন্তু বেশি সংখ্যায় রকেট উৎক্ষেপণের সাথে সাথে বেড়েছে তার ঝুঁকিও।

“আমি বলবো, অন্যান্য সময়ের চেয়ে গত বছর আমরা অনেক বেশি ব্যর্থতার ঘটনা দেখেছি। এর কারণ, আমরা এমন একটি পর্যায়ে যেতে শুরু করছি যেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি বেশ ক’টি নতুন লঞ্চ ভেহিকেল চালু হচ্ছে,” বলছেন তিনি। এবং যে কোন রকেট লঞ্চে প্রথম দিকের ফ্লাইটগুলিতেই সবসময় বেশি সমস্যা থাকে।“

স্টারশিপ ওয়ান এবং নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রাম - যেটি প্রথমবারের মতো ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে সফলভাবে চালু হয় - এসব নতুন লঞ্চ ভেহিকেলগুলির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। কিন্তু এরা সমস্যার ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। নতুন নতুন লঞ্চ ভেহিকেল চালুর সাথে আসে আরও বেশি অনিশ্চয়তা, বিশেষ করে প্রথম দিকের কয়েকটি ফ্লাইটের সাথে।

সর্বাধিক দেখা খবর